কাজি আরিফ হাসান : গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের তোপের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে তার ছোট বোন শেখ রেহেনাকে নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান। তবে আওয়ামী সরকারের পতন পূর্বে থেকে বুঝতে পেরেছিলো এবং এই আওয়ামী সরকারের হিসাব শেষ তাই তার দুই ডজন মন্ত্রী এমপিরা আগেই দেশ ছাড়ে। তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যের বিষয় ২০০৬ সালে শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায় সরকারের রোষানলে পরে রাজ বন্দি হওয়ার পরে ২০০৮ সালে সরকার গঠন করে যুদ্ধ অপরাধী ও তার বাবা বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করেছেন। তিনি সব সময় প্রতি হিংসার রাজনীতি করেছেন,করেছে নিজ স্বার্থের রাজনীতি। দীর্ঘ ১৫ বছরে শেখ হাসিনার সরকার লুটেপুটে শেষ করে গেছে। দেশে নিরবে অন্যান্য,অত্যাচার, অপরাধ বাঙালি জাতি ভোলেনি। এগুলো তো বিচার হতেই হবে।দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে ব্যাংক হয়েছে খালি,আর এই টাকা পাচাীকারিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে অবশ্যই। যুব সমাজকে মাদকাসক্ত করে সমাজকে করেছে পঙ্গু।জাতি ভোলেনি পিলখানার বিডিয়ার হত্যা,জাতি ভোলেনি সাংবাদিক দম্পতি সাগর- রুনি হত্যা,ভোলেনি শাপলা চত্বরে হেফাজতি ইসলামের শিক্ষার্থীদের হত্যা করে লাশ গুম করা,ভোলেনি নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ৭ খুন। এছাড়াও ভোলেনি আওয়ামীলীগ সরকারের সময় অনেক নিরিহ মানুষকে মাদক দিয়ে ফাসিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিনোর কথাও, তা এই আওয়ামিলীগ নেতাদের বিচার হতে হবে এই বাংলার মাটিতে। চালের কেজি ৭০ টাকা,গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা, চিনির কেজি ১৪০ টাকা,সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়ে সিন্ডিকেট করে পালিয়ে গেছে,আর এদের কি ছেড়ে দেয়া হবে? কখনোই না। দেশের মানুষ ছাগল না। রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলার,গার্মেন্টস শিল্প শেষ! এগুলো কি দেশের মানুষ ছেড়ে দেবে? কখনোই না,এদের বিচার হতেই হবে। দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ আর সাধারণ মানুষ বোবা কান্না ছিলো,এখন আর বোবা কান্না নয়,জেগে উঠেছে বাংলার মানুষ। শেখ হাসিনার সরকার নিরবে মানুষ হত্যা করে হাজারও মায়ের বুক খালি করেছে। এই জালিম সরকারের আমলে হাজারও নারী নিরবেই ধর্ষণ হয়েছে আওয়ামিলীগে মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামিলীগ নেতাদের কাছে। ভাঙালি ভুলে নাই শাপলা চত্বরে ফ্লাট লাইট বন্ধ করে শিশুদের হত্যা করে ড্রেনে ভাসিয়ে দেয়ার কথা,ভুলে নাই সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার হিসাব, ভুলে নাই পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ৫৮ জন সেনা অফিসার হত্যার লোমহর্ষক ঘটনা,ভুলে নাই, নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ৭ খুন,ভুলে নাই।এগুলো কি মাফ হয়ে যাবে? দেশে পদ্মা সেতু,বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটালাইট,পারমাণবিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র,কর্ণফুলী টানেল,শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনালসহ নানা প্রকল্প, যা উন্নয়ন করেছে আওয়ামিলীগ সরকার তা ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত, কিন্ত এর পূর্বে আওয়ামিলীগ নেতাকর্মীরা তাদের আখের গোছালেও তা ২০২৪ইং সালেও তাদের শেষ হয়নি। তারা বিগত ৫ /৬ বছরে উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এর পূর্বের বছর গুলো কোনো উন্নয়নই এই আওয়ামীলীগ সরকার। এই আওয়ামিলীগ সরকারের অপরাধের বিচার হতেই হবে। জাতির চাওয়া শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটিতে এনে বিচার করা হোক। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন,শেখ এর বেটি পালায় না,তাহলে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পালালো কেনো? জাতি জানতে চায়। এদেশের মানুষ ২০০৯ইং থেকে ২০২৪ইং সাল দীর্ঘ ১৬ বছরে অনেক নির্যাতন সহ্য করেছে। এই জুলুম ও অত্যাচারের দিন শেষ হয়েছে। এদেশে যারা শেখ পরিবার ও যারা আওয়ামিলীগ সমর্থন করতো তারাই শুধু দেশের টাকা লুটপাট করেছে। এবার দেশের ছাত্র-জনতা একত্রে এই স্বৈরাচার আওয়ামী জালিম সরকারকে তার পদত্যাগ করিয়েছে। ইতোমধ্যে গত ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা হয়েছে। শুধু ১৩ আগস্ট নয় এর পর থেকে সারাদেশে শেখ হাসিনা ও সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক আওয়ামী মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে,এবং অনেক সাবেক মন্ত্রী-এমপিরাও গ্রেফতার হয়েছে ও তাদের রিমান্ডে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্যও বেরিয়ে আসছে। কিছু উল্লেখযোগ্য আসামিগন হলেন শেখ হাসিনা,ওবায়দুল কাদের,আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ,সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান,জুনাইদ আহমেদ পলক,সালমান এফ রহমান,আনিছুর রহমান,ডাঃদিপুমনি,জয়,জিয়াউল আহসান,বিপ্লব কুমার সরকার,এম তাজুল ইসলা,অজ্ঞাত আরো অনেক কে আসামি করে। এই আগষ্ট মাসই আওয়ামিলীগ সরকারের শোকের মাস আর ২০ কোটি বাঙালির বিজয়ের মাস। বিজয়ের উল্লাসে ভাসছে সারা দেশবাসী। দেশের শিক্ষিত সমাজ জানায়,এটা স্বাধীনতা নয় এটা একটা দেশের গণঅভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছে,একটি দেশের ফ্যাসিবা ও স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছে এই ছাত্র-জনতা। এই গণঅভ্যুত্থান অনেক শিক্ষার্থীদের প্রানও দিতে হয়েছে,আর এ গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের স্যালুট জানায় এ বাঙালি জাতি। তবে বাঙালি ১৯৫২, ৬৯,৭১ এর স্বাধীনতা ও ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান ভোলেনি। এই আগস্ট মাসের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হয়,এই আগস্ট মাসের ২১শে আগস্টই আওয়ামিলীগের ওপর গ্রেনেড হামলা হয়,এই আগস্ট মাসেই ৫ আগস্ট আরো একটি নতুন শোকে দিন সুচনা হলো আওয়ামিলীগে এবং বিজয় সুচানা হলো ছাত্র-জনতার। ২০২৪ইং সালের ৫ আগস্ট (সোমবার) এই দিনটিও ভুলবে না বাঙালি জাতি। ইতিহাসের পাতা থেকে যাবে দিনটি। এদকিে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির সমর্থনধারীরা সারাদেশে লুটতোরাজ-হামলা চালায়। সেই সাথে তাদের ধারনা বিএনপি ক্ষমতায় চলে এসেছে। দেশের সাধারণ মানুষে এমন প্রশ্ন এরা কারা? শুধু তাই নয় আওয়ামিলীগ সরকারে পদত্যাগের সাথে সাথে কি ভারত থেকে দীর্ঘ ৮ বছর পর দেশে ফেরার অনুমতি পেয়ে গেলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন? শুধু তাই নয় তিনি দেশে ফিরে এস আলমের গাড়ি বহরে শোডাউন হতে দেখা যায় যার কারনে তাকে শোকজ করা হয় বলে জানা যায়। এ দিকে বিএনপির মহাসচিব মীর্জ ফখরুল ইসলাম এক বক্তব্যে বলেন,যারা এই সুযোগে বিএনপির সংগঠনের সুনাম নষ্ট করা জন্য চাঁদাবাজি,দখলবাজি,লুটতরাজ করছে এবং মহল্লা মহল্লায় ধারলো অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে ও মারধর করছে তাদেরকে এলাকাবাসী ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তারা আমাদের দলের কেউ না। দেশের আপামোর জনগনের বক্তব্য,দেশের আইনশৃঙ্খলা কেনো নিস্তব হয়ে গেলো ? জনসাধার অনেকেই জানান,দেশে সব রাজনৈতিক দলে নেতাদের বেফাস বক্তব্য না দিয়ে সঠিক ভাবে মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দেয়া উচিৎ। ৫ আগস্টের পরে সারা দেশে যে তান্ডব হয়েছে তাতে অনেক পুলিশ সদস্যরাও আহত ও নিহত হয়েছেন। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সেনা প্রধান ওয়াকারউজ্জামান তার ভাষণে জানান, সব হত্যার বিচার হবে। তবে পুলিশ কেনো এখনো তাদের দায়িত্ব থেকে নিরব আছে? জনগনের দাবি এ দেশের পুলিশ প্রশাসনকে দলীয় মুক্তকরন করতে হবে এবং পুলিশ সদস্যদের স্বতস্ফুর্ত ভাবে সাধারন জনগণের পাশে থেকে কাজ করতে হবে। পুলিশের ওপর আস্তা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং দেশে বিভিন্ন স্থানে যে অরাজকতা দেখা দিয়েছে পুলিকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। দেশের মানুষের কথা-সবাই যদি মনে করেন ২০ বছরের রোগ ২০ দিনে ভালো হয়ে যাবে তাহলে এটা ভাবা অনেকটা বোকামি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামীতে একটি সুন্দর নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে দেশে একটি অবাধ-সুষ্ঠ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দেবেন। দেশের মানুষের চাওয়া সামনে একটা সুন্দর সরকার দেশ শাষন করবে তার জন্যই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করবেন।