প্রায় দেড় যুগ পর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় সরকারের। শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে গত সোমবার (৫ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান সদ্য সাবেক হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা চালান বিক্ষুব্ধরা। বাদ যায়নি জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার বাড়িও। নড়াইল-২ আসনের সদ্য সাবেক হওয়া সংসদ সদস্য মাশরাফীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে আগুন দেয় দুষ্কৃতকারীরা।
তবে ভারতে প্রচার করা হয়েছে জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়ি বলে। ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যম ফ্যাক্ট চ্যাকিংয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় আসল ঘটনা। এ ছাড়া পাকিস্তানের বহুল প্রচলিত গণমাধ্যম দ্য ডনের ফ্যাক্টচেকেও উঠে এসেছে সঠিক তথ্য।
ভারতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে হিন্দুত্ব নাইটস নামের একটি পেজে মাশরাফীর পুড়ে যাওয়া বাড়ির ছবির পাশে লিটন দাসের একটি ছবি কোলাজ করে পোস্ট করা হয়। আর ক্যাপশনে লেখা হয়, বাংলাদেশি হিন্দু ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৫ আগস্ট) দেওয়া সে পোস্টের ভিউ এখন পর্যন্ত ১৬ লাখেরও বেশি। গত দুদিনে এই পেজে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ বলে অনেক ছবি ও ভিডিও ছড়ানো হয়।
এ ছাড়া এক্সের সুনন্দা রয় আরও একটি পেজে একই ছবি পোস্ট করা হয়। আর ক্যাপশনে লেখা হয়, ইনি লিটন দাস, বাংলাদেশের ক্রিকেটার। বাংলাদেশে তিনি জাতীয় নায়ক, তার বাড়ি ইসলামপন্থিরা পুড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে একজন এলিট শ্রেণির হিন্দুর এই অবস্থা, তাহলে সাধারণ হিন্দুদের কী অবস্থা ভাবুন!
প্রায় একই সুরে এক্সে পোস্ট করেছে দীপক কুমার, সত্য প্রকাশ, প্রতীকসহ আরও অনেকে।
তবে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) ভারতীয় গণমাধ্যম দৈনিক দ্য ইকোনমিক টাইমস এ নিয়ে এক প্রতিবেদন করে। সে প্রতিবেদনের শিরোনাম হচ্ছে, বাংলাদেশি ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়ি আন্দোলনকারীরা পুড়িয়ে দিয়েছে? ভাইরাল ভিডিওর পেছনের সত্যিটা এখানে।
এই প্রতিবেদনে আসল ঘটনাটি জানায় গণমাধ্যমটি। প্রতিবেদনটির এক জায়গা লিখেছে, লিখেছে, পুড়তে থাকা বাড়ির যে ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি লিটন দাসের নয়, মাশরাফীর বাড়ি।
দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ লোকগুলো কারা যারা লিটন দাসের বাড়ি পোড়ানো হচ্ছে বলে খবর ছড়াচ্ছে? এমন ভুয়া খবর ছড়ানো বন্ধ হওয়া উচিত! এটা নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফীর বাড়ি। তিনিও সাবেক বাংলাদেশের ক্রিকেটার।
প্রতিবেদনের পরের অংশটিতে লেখা, এই হিন্দু-মুসলিম রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত! তবে আমরা এটাও অস্বীকার করতে পারি না যে, বাংলাদেশে অনেক প্রাণ ঝরছে, অনেক সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এ সহিংসতাও বন্ধ হওয়া উচিত!
এ দিকে পাকিস্তানের গণমাধ্যম দ্য ডনও এ নিয়ে ফ্যাক্ট চেক করেছে। এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সহিংসতায় মাশরাফীর বাড়ি পুড়েছে, লিটন দাসের নয়।