ময়মনসিংহের গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক পদে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শফিকুল ইসলামের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে উত্তাল গৌরীপুর। সাত দিন ধরে তালা ঝুলছে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে। চলেছে লাগাতার কর্মসূচি।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুরে বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
এর আগে একই দাবিতে গত ১৪ আগস্ট প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে ১৫ আগস্ট ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ ও ১৮ আগস্ট স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে পাঠদান চালু থাকলেও প্রধান শিক্ষকের কক্ষ এখনো তালাবদ্ধ রয়েছে। বিষয়টি আমরা ইউএনও মহোদয়কে জানিয়েছি।
জানা গেছে, গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রধান শিক্ষক পদে ১০জন, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ৪ জন ও নিরাপত্তা কর্মী পদে ৭ জন আবেদন করেন। ২ আগস্ট বিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রধান শিক্ষক পদে শফিকুল ইসলাম, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ইয়াসিন মোহাম্মদ আরাফাত ও নিরাপত্তা কর্মী পদে রফিকুল ইসলাম নিয়োগ পান। নিয়োগপত্র অনুযায়ী গত ১৪ আগস্ট প্রধান শিক্ষক পদে শফিকুল ইসলাম যোগদান করেন। ওই দিনই বিক্ষুব্ধ জনতা এসে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন।
প্রধান শিক্ষক পদে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ১৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামসুজ্জামান দুর্জয় ইউএনও বরাবার লিখিত অভিযোগ দেয়। ১৮ আগস্ট নিয়োগ ও কমিটি বাতিলের দাবিতে ইউএনও বরাবার স্মারকলিপি দেন বোকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুল ইসলাম খান শহীদ।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যালয়ের সামনে গৌরীপুরের সর্বস্তরের জনগণ এই ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের দাবিতে ২৪ ঘন্টা আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আকবর আনিছ বলেন, গত ২ আগস্ট জরুরি অবস্থা চলাকালীন সময়ে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে মাওহা ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলামকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে এমন আলোচনা আছে। নিয়োগ ও কমিটি বাতিল করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অনুযায়ী নিয়োগ ও কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি।
বোকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুল ইসলাম খান শহীদ বলেন, আমরা প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও কমিটি বাতিলের দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ও স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কমিটি ও নিয়োগ বাতিল হয়নি। তাই আজকে ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়েছি। দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচি দেব।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত মো. শফিকুল ইসলাম জানান, নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী মেধা যাচাইয়ে প্রথম হওয়ায় নিয়োগ পেয়েছি। টাকা লেনদেনের অভিযোগ মিথ্যা।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও লেনদেনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। নিয়োগ বিধিমালার বিধিবিধান মেনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মহাপরিচালকের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে তারাই প্রশ্ন করেছেন, পরীক্ষা নিয়েছেন। মেধা যাচাইয়ের ভিত্তিতে যিনি প্রথম হয়েছেন, তাকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ইউএনও মো. শাকিল আহমেদ বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগ অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কমিটি বাতিলের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।