আফছার উদ্দিন ফরিদ ।
১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড় ছিল একটি শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় যা ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ-এর) দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে। এ পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ঘূর্নিঝড়সমূহের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্নিঝড় এবং এটি সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি। এ ঝড়ের কারণে প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।যার অধিকাংশই গাঙ্গেয় বদ্বীপের সমুদ্র সমতলের ভূমিতে জলোচ্ছ্বাসে ডুবে মারা যান। এটি ১৯৭০-এর উত্তর ভারতীয় ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের ৬ষ্ঠ ঘূর্ণিঝড় এবং মৌসুমের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ছিল। এটি সিম্পসন স্কেলে ‘ক্যাটাগরি ৩’ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ছিল। ঘূর্ণিঝড়টি বঙ্গোপসাগরে ৮ই নভেম্বর সৃষ্ট হয় এবং ক্রমশ শক্তিশালী হতে হতে এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ই নভেম্বর এটির গতিবেগ সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি (১১৫ মাইল) এ পৌঁছায় এবং সে রাতেই তা উপকূলে আঘাত করে। জলচ্ছাসের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপসমূহ প্লাবিত হয়। এতে ঐসব এলাকার বাড়ি-ঘর, গ্রাম ও শস্য স্রোতে তলিয়ে যায়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ছিল বর্ততমান ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলা। সেখানে ১৬৭০০০ জন অধিবাসীর মধ্যে ৭৭০০০ জনই (৪৬%) প্রাণ হারায়।
পাকিস্তানের সামরিক সরকার এমন ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও জরুরি ত্রাণকার্য পরিচালনায় গড়িমসি করে। ঘূর্ণিঝড়ের পরও যারা বেঁচে ছিল তারা মারা যায় খাবার আর পানির অভাবে। ঘূর্ণিঝড়ের এক সপ্তাহ পরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান স্বীকার করে সরকার দুর্যোগের ভয়াবহতা বুঝতে না পারার কারণেই ত্রাণকার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত মানুষগুলোর প্রতি পাকিস্তান সরকারের এমন নিষ্ঠুরতা দেখে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ২৪শে নভেম্বর এক সভায় মাওলানা ভাসানী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ তোলেন এবং অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করেন।পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট চীন সফরে ছিলেন। সফর শেষ করে এ এলাকা টি সফর করতে গরিমসি করতে থাকেন । এতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের বুজতে আর বাকি রইল না যে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রতি যে তাদের কোন প্রকার ভালোবাসা ও দ্বায়বদ্ধতা ছিল না সেটি স্পর্শ ফুটে উঠে।প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দেখতে আসেন ঠিকই কিন্তু বিমান থেকে নামার কোন প্রয়োজন বোধ করেননি । তিনি বিমান থেকে দেখেই চলে যান। যা ছিল এদেশের মানুুষের জন্য অনেক কষ্টের বিষয়। তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিপুল ভোটে প্রাদেশিকভাবে জয়লাভ করে এবং ঘটনাপ্রবাহে ইতিহাসে প্রথমবারের মত একটি প্রাকৃতিক ঘটনা একটি দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
‘ভোলা সাইক্লোন’ এ পর্যন্ত রেকর্ড কৃত ঘূর্ণঝড় সমুহের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণঝড়। এটি সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যে ঘূর্ণঝড় এত মানুষ প্রাণহানি ঘটে, যে ঘূর্ণঝড় কেন্দ্র করে স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাই উপকূল বাসির দাবি এ দিবসটিকে উপকূল দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক ।
উপকূল দিবস হিসেবে ঘোষণা করলে সকলে ১২ নভেম্বর কে উপকূল দিবস হিসেবে পালন করবে । এখন শুধু সম্মানিত সাংবাদিক বৃন্দ ও সুশীল সমাজ এ দিবস টিকে পালন করে আসছে । দিবস হিসেবে ঘোষনা করলে সকলে পালনের মাধ্যমে এত এত মানুষের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। সঠিক এ ইতিহাস সকলে জানতে পারবে। আগামী প্রজন্ম দিবসটি পালনের মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
লেখকঃ সভাপতি, ঢাকাস্থ তজুমদ্দিন থানা ছাত্র-ছাত্রী কল্যাণ সংসদ।ও প্রকাশকঃ নবযুগ.কম।