দেশের শহরাঞ্চলে বেশির ভাগ নারী গণপরিবহন, রাস্তা ও মার্কেটের মতো জায়গায় যৌন হয়রানির শিকার হন। প্রায় ৮৫ শতাংশ নারী বাস কন্ডাক্টর বা চালকের বাজে মন্তব্যের মুখোমুখি হন। একশন এইডের গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া (ছদ্মনাম)। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন চাকুরী করেন। অফিস ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতে মিরপুর থেকে ধানমন্ডি এলাকায় যেতে গণপরিবহন ব্যবহার করেন তিনি। নিয়মিত বাসে যাতায়াতে ভোগান্তি ছাড়াও বিভিন্ন সময় যৌন হয়রানির শিকারও হয়েছেন রোকেয়া।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে জানান এই তরুণী বাস যাতায়াতে তার তিক্ত অভিজ্ঞাতার কথা।
তিনি বলেন, “চালকের সহকারি কিংবা পুরুষ যাত্রীদের আপত্তিকর স্পর্শের শিকার প্রায়ই হই। বিব্রত হয়ে প্রতিবাদ করার সাহসও করতে পারি না। আর কোন দিন যদি প্রতিবাদ করেও ফেলি তাহলে শুনতে হয় নানা কটু কথা। তাই বাধ্য হয়ে কোনোভাবে এড়িয়ে যাই। আর বিকল্প পরিবহনে যাতাযাতের সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হচ্ছে এসব।”
এবিষয়ে নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, যৌন হয়রানির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন না থাকা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই এমন হয়রানি থামছে না।
বেসরকারি সংস্থা একশন এইডের গবেষণায় উঠে এসেছে, ৫০ শতাংশ নারীই যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করেন না। আর ৮০ শতাংশ নারী মনে করেন, পুলিশ তাদের অভিযোগ আমলে নেবে না। ২০১৪ সালের ওই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নারীরা বেশি হয়রানির শিকার হন বাসের গণপরিবহনে।
উত্ত্যক্ত বা যৌন হয়রানি বন্ধের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম জানান, এনিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি খসড়া তৈরি করে সরকারের কাছে পাঠানো হলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এছাড়া একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, শুধু আইনি দুর্বলতা নয়, যৌন হয়রানির জন্য সামাজিক বৈষম্যও অনেকাংশে দায়ী। সংবিধানে নারী-পুুরুষের সম-অধিকারের কথা বলা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা নিশ্চিত করা যায়নি। আর পারিবারিক পর্যায় থেকেই বৈষম্যের শুরু বলে জানান তিনি।
পোশাকশিল্প থেকে শুরু করে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সরব বিচরণ। তারপরও ঘরের বাইরে একা চলতে নিরাপদ বোধ করেন না বেশির ভাগ নারী। জরিপ বলছে, শহরাঞ্চলের নব্বই ভাগ নারীই পথ চলতে গিয়ে শঙ্কায় থাকেন। এর বড় কারণ যৌন হয়রানি এবং নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা হয় তাদের।
সূত্রঃ ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি