বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। পদত্যাগের পর দেশ ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এদিন সারা দেশে বিক্ষুব্ধ জনতার রোষানলের পড়ে পুলিশ সদস্যরা। ভাঙচুর করা হয় বাহিনীটির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও থানা। ফলে মুখথুবড়ে পড়ে বিভিন্ন থানার কার্যক্রম। পুলিশের অনেক সদস্যই কর্ম বিরতিতে চলে যান।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সারা দেশের সর্বমোট ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৬২৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মেট্রোপলিটন (মহানগর) এলাকার ১১০টি থানার মধ্যে ১০৮টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৫২০টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এছাড়া ১১টি থানা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস্, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সকল সরঞ্জামাদি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় এসব থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এই ১১টি থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।
এর আগে গত শনিবার পুলিম সদর দপ্তর জানিয়েছিল, থানার কার্যক্রম পুনরুদ্ধার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি থানা এলাকায় নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠনের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সকল জেলা পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কমিটির প্রধান লক্ষ্য হবে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো। এ লক্ষ্যে কমিটি একটি অ্যাকশন প্ল্যান প্রস্তুত করে মনিটরিং ও মূল্যায়নের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কমিটির আওতাধীন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে যৌথ টহল প্রদানের মাধ্যমে হানাহানি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এলাকায় বিদ্যমান সামাজিক সংঘাত যেমন বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি নিরসনে নিবিড় ব্যক্তিগত যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নিবে। স্থানীয় জনসাধারণের জীবন, সম্পদ, স্থাপনা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়সহ এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা নিয়মিত তদারকি করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এলাকার মাদক, ইভটিজিং ইত্যাদি সমস্যা নিরসনে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া, স্থানীয় বিভিন্ন ধর্মীয় রাজনৈতিক দলসমূহ ও দল-উপদলের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা নিরসন ও সম্প্রীতি স্থাপনের লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা কমিটির আকার নির্ধারণ করবেন। গ্রহণযোগ্য আইনজীবী/বিচারক, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, সিনিয়র সিটিজেন, সর্বজন সমাদৃত স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের সভাপতি/সেক্রেটারি, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকারকর্মী এবং এনজিও প্রতিনিধি কমিটির সদস্য হবেন।
কমিটি পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা বিঘ্নকারীদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলা; কেউ যেন কোন প্রকারের উসকানি দিয়ে পরিবেশ ঘোলাটে করতে না পারে সেজন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং পুলিশ সদস্যদেরকে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করবে।