রংপুরের মিঠাপুকুরে এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে এক যুবকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। একটি রাস্তার নির্মাণ কাজে বাধা দিয়েছিলেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। এর প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হয় মোছাব্বির বকশি (২৪) নামে ওই যুবক।
আভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুবুল হক বাবলু (৫৫) খোড়াগাছ ইউনিয়ন আ. লীগের সাবেক সভাপতি। সর্বশেষ গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রাতে আ.লীগ নেতা মাহাবুবুল হক বাবলুকে প্রধান আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন হামলার শিকার যুবক।
জানা গেছে, উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের হাঁড়িভাঙ্গা আমের রাজ্যখ্যাত পদাগঞ্জ বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত একটি রাস্তার নির্মাণ কাজ চলছে। উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের অধীনে ১৬০০ ফিট হেরিংবন রাস্তাটি পদাগঞ্জ আম চত্বর থেকে রংপুরগামী রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত। গত প্রায় এক মাস আগে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া রাস্তাটির কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর মাত্র ২০ থেকে ৩০ ফিট কাজ করলেই রাস্তাটির সুফল ভোগ করবে হাজারো জনগণ। কিন্তু জনগণের কথা না ভেবে নিজের স্বার্থ আর দলীয় প্রভাব বিস্তার ঠিক রাখতেই রাস্তাটির নির্মাণ কাজে বাধার সৃষ্টি করেছেন আ.লীগের ওই নেতা বাবলু।
আরও জানা যায়, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন খোড়াগাছ পশ্চিমপাড়া গ্রামের আনসার বকশীর ছেলে মোছাব্বির বকশি নামে এক যুবক। নির্মাণাধীন হেরিংবন রাস্তাটি খোড়াগাছ ইউনিয়নের আমেনা হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে রোস্তমাবাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। কিন্তু রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ নেতাদের নানা অনিয়ম আর অভিযোগ থাকলেও কেউই মুখ খোলার সাহস পায়নি। যেভাবেই হোক রাস্তার কাজ সম্পন্ন হোক এটাই ছিল জনসাধারণের প্রত্যাশা। রাস্তাটির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে হলেও বন্ধ হয়নি চক্রান্ত। কারণ নির্মাণাধীন রাস্তার দক্ষিণ দিকে অর্থাৎ শেষ অংশের দিকে আ.লীগ নেতা মাহাবুবুল হক বাবলুর দোকান রয়েছে। তার সে দোকানের সুবিধার্থে অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ওই আ.লীগ নেতা স্থানীয় জনগণকে ভুল বুঝিয়ে উসকে দিয়ে একের পর এক বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেন, যাতে রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে সাধারণ জনগণ প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরে ওই আ.লীগ নেতার পিছু ছাড়েন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চিহ্নিত কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে সঙ্গে নিয়ে যুবকের উপর হামলা করেন। আত্মরক্ষায় সেদিন কোনো রকমে প্রাণে বাঁচলেও হুমকির মুখে রয়েছেন ওই যুবক।
স্থানীয় বাসিন্দা মনোহর হোসেনসহ অনেকে জানান, ঘটনার দিন ঠিকঠাকভাবেই রাস্তার কাজ চলছিল। পাশের মার্কেটের একটি দোকানে বকসি বসে ছিলেন। হঠাৎ ২৫-৩০ জন লোক এসে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়ে পাশের দোকানপাট ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে তারা বকসির উপর আক্রমণ করেন। সে জীবন নিয়ে কোনো রকমে পালিয়ে যায়।
হামলার শিকার মোছাব্বির বকশি বলেন, নির্মাণাধীন রাস্তাটির কিছু অংশ আমার জমির উপর দিয়ে হচ্ছে। আমি সবার কথা বিবেচনা করে চাইছি রাস্তাটি হোক। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা বাবলু আধিপত্য বিস্তার করে আমার উপর হামলা চালিয়েছে। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।
অভিযুক্ত ইউনিয়ন আ.লীগ নেতা মাহাবুবুল হক বাবলু কালবেলাকে বলেন, হামলার বিষয়ে অনেকে ফোন দিয়ে জানাচ্ছে কিন্তু এর সঙ্গে আমি জড়িত নই। কেন হামলা হলো, কি কারণে হামলা এবং দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে আমি জানি না। এর আগে রাস্তার কাজে বাধা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, রাস্তাটির অন্য আরেকটি রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত অংশটি ১৫ ফিট হলে ভালো হয়। বকশি নামে এক যুবকের নিজস্ব জমি থাকায় তার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা হয়েছে। কিন্তু রাস্তার কাজে বাধা দেওয়া ও হামলার ঘটনা দুঃখজনক।
মিঠাপুকুর থানার ওসি (তদন্ত) নুর আলম কালবেলাকে বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।