দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। যেই হোক- দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে আমরা ধরব।
শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাজেট নিয়ে এমপিদের আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই বাজেটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সংসদ সদস্যরা সংসদে আলোচনা করে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া বাইরেও (সংসদের বাইরে) অনেকেই বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা যা পরামর্শ দেওয়ার তা দিয়েছেন। কেউ কেউ বাজেটকে উচ্চবিলাসী বলেছেন।
শেখা হাসিনা বলেন, বিরোধীদলীয় নেতারা বলেছেন এ বাজেট বাস্তবায়ন যোগ্য না। প্রবৃদ্ধির হার কমাতে হবে, বার্ষিক উন্নয়নের হার কমাতে হবে। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো সক্ষমতা আছে কি না? চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই আমাদের কাজ। চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলতে চাই। চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।
২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিক রাষ্ট্র পরিচালনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে পড়েনি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ পিছিয়ে যাবে না। যে যতই চেষ্টা করুক দেশকে ধ্বংস করতে পারবে না। এই স্বপ্নযাত্রার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে এ দেশের মানুষ।
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কালো টাকা সাদা না। এখন সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ঢাকায় এক কাঠা জমি আছে সে কয়েক কোটি টাকার মালিক। এভাবে অনেক সময় কিছু করতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে। সেটা তারা বাজেটে দেখাতে পারে না, আয়কর দিতে পারে না। আয়কর দিয়ে যাতে মূল জনগোষ্ঠীতে ফিরে আসে… এ ধরনের কর্মকাণ্ড যাতে না করে সে জন্য মাঝে মাঝে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুযোগ খালেদা জিয়া নিয়েছিলেন, ড. কামাল হোসেনসহ আরও অনেকেই নিয়েছিলেন। জেনারেল এরশাদ সাহেবও মনে হয় করেছেন।
বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদেরের বক্তব্যের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, টেন্ডারের শুভঙ্করের ফাঁকির কথা উনি বলেছেন। টেন্ডার না দিয়ে কাজ দেওয়া। উনি তো মন্ত্রী ছিলেন টেন্ডার না দিয়ে কাজ করে, কাজের মাধ্যমে কিছু উপার্জন করার বিষয় মনে হয় উনি নিজেই রপ্ত করেছেন।
মেট্রোরেল নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলছে। এই মেট্রোরেলে দুই লাখ ৪০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। কিছু অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, মানে আঁতেল আর কী। বুদ্ধি বেচিয়া জীবিকা নির্বাহ করেন যারা- তারা বলেছিলেন মেট্রোরেলের কী প্রয়োজন ছিল? ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ না করে মেট্রোরেল না করলেই চলত। এটা তো অপচয়। তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে বাস কিনলেই তো যানজট মুক্ত হবে। এই হলো বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধি! এখন মেট্রোরেল মানুষের জীবন বিশেষ করে মহিলাদের জন্য সব থেকে নিরাপদে চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা এখন কী বলবেন সেটা আমার একটু জানতে ইচ্ছে করে। তাদের সঙ্গে দেখা হলে একটু জিজ্ঞাসা করতে পারতাম।
তিনি বলেন, এমআরটি লাইন-১, লাইন-২, লাইন-৪ ও লাইন-৫ এর কাজ পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করলে ঢাকা শহরে আর যানজট বলে কিছু থাকবে না। মানুষ খুব আরামে চলাচল করতে পারবে। তাদের জীবনমান উন্নত হবে। আমরা সবগুলো বিভাগীয় শহরে মেট্রোরেল চালু করে দেব সেই পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
বাংলাদেশ হবে যোগযোগের হাব
যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের হাব হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলে সরকারপ্রধান আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, সরকার সারাদেশব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছে বলেই অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে। আমার লক্ষ্য কেবল বাংলাদেশ নয়, আমরা এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবো। প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে।
বড়লোকদের এলাকায় লোডশেডিং দেব
শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক কথা। যে বিশেষ আইন করেছি সেটা নিয়েও সমালোচনা শুনছি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই বিশেষ আইন যদি না করতাম। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ না করলে আজকে বিদ্যুৎটা আসত কোথা থেকে? আমরা ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ যাতে পরিবেশবান্ধব হয় আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। নেপাল ও ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোডশেডিং! আমি বলে দিয়েছি আমার গ্রামে লোডশেডিং যেন না দেয়। গুলশান, বনানী, বারিধারা, এসব বড়লোকদের এলাকায় ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং দিয়ে তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে এখন এয়ার কন্ডিশন, গাড়ি, লিফট ইত্যাদি আরাম-আয়েশটা এটা যে আসমান থেকে পড়েনি। এটা আমাদের করা সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অন্তত লোডশেডিং বিত্তশালীদের দিতে হবে। এই ব্যবস্থাটা আমরা করব।