কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ি। অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে প্লাবিত হয়েছে গ্রাম থেকে শহর। এর আগে খাগাড়ছড়ি ঝেলা শহরের নিম্নাঞ্চল ও দীঘিনালার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও এবার তা রামগড়, মাটিরাঙ্গা, মহালছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল থেকে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে খাগড়াছড়ি শহরের ভেতরে প্রবেশ করছে বন্যার পানি।
সকাল থেকে খাগাড়ছড়ি জেলা শহরের আদালত সড়ক, মাস্টারপাড়া, মিলনপুর, বায়তুশরফসহ খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন সড়ক এখন পানির নিচে। কার্যত পানিবন্দি হয়ে হয়ে পড়েছে শহরের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ।
টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টি আর নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলা সদরের গঞ্জপাড়া, অপর্ণা চৌধুরী পাড়া, রাজ্যমনি পাড়া, কালাডেবা, বটতলী, ফুটবিল, শান্তিনগর, মুসলিম পাড়া পুরোপুরি পানির নিচে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ি সদরের তিন হাজার হাজার মানুষ।
খাগড়াছড়ি পৌর শহরের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, অতীতেও বন্যার পানি দেখেছি। তবে এত পানি গত একযুগেও দেখিনি। জেলা সদরের নিম্নাঞ্চল ছাড়িয়ে শহরেও উঠেছে পানি।
প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মাইনি নদীর পানি বেড়ে দীঘিনালার মেরুং, বোয়ালখালি ও কবাখালি ইউনিয়নের ৫০টির মতো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ডুবে গেছে ঘর-বাড়ি, সড়ক, কৃষি জমি ও পুকুর। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগে পড়েছে প্লাবিত সাধারণ মানুষ।
জেলার মাটিরাঙ্গার তাইন্দং, তবলছড়ি, বড়নাল ও আমতলী ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ন এলাকা। গত ৪০ বছরেও মাটিরাঙ্গার কোথাও বন্যার পানি উঠতে দেখেননি জানিয়ে তাইন্দং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আমির হোসেন বলেন, বন্যার পানিতে কয়েকশ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। পানির নীচে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি।
মেরং ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ঘনশ্যাম ত্রিপুরা বলেন, বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। মাইনি নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গ্রামের সঙ্গে এখন শহরগুলোও পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও ডুবতে শুরু হয়েছে। মেরুং বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রের নিচতলা ডুবে ডুবে যাওয়ায় সেখানে আশ্রয় নেওয়া ২৯টি পরিবারকে বিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলায় তুলে দেওয়া হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহিম।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বলেন, স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় খাগাড়ছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে পানির নিচে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। ইতোমধ্যে দুর্গত মানুষের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় খাগাড়ছড়ি প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানিয়ে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, পুরো জেলায় ৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রিতদের জন্য শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।