বগুড়ার শেরপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে কথিত তিন সাংবাদিককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। এ সময় তাদের কাছ থেকে একাধিক পত্রিকার ভুয়া আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ওই সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের আরও চার সদস্য পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শেরপুর থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের শুভলি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারজানা ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- জেলার গাবতলী উপজেলার মারিয়া গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে ও বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুল হালিম (৪০), বগুড়া সদর উপজেলার শিববাটি গ্রামের রোস্তম সেখের ছেলে ও স্বাধীন বাংলা নিউজ অনলাইন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মোক্তার সেখ (৩৯) ও শেরপুর শহরের উত্তরসাহা পাড়া মহল্লার সিরাজ উদ্দিন খানের ছেলে ও দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার শেরপুর প্রতিনিধি রায়হান পারভেজ কমল (৩৯)।
মামলায় আটক ওই তিনজন ছাড়াও উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ঘোলাগাড়ী ঘুটুবটতলা গ্রামের মাসুদ রানাসহ (৩০) অজ্ঞাত আরও দুই-তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ বাকিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার হুসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেন তারা। এরপর প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুমের কাছে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে বসেন। অন্যথায় তার স্কুলের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর পত্রিকায় ছাপানোসহ বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেন।
একপর্যায়ে ওই প্রধান শিক্ষক তাদের এক হাজার টাকা দেন। এরপর পাশের শুভ কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে সিএইচসিপি মাসুদ রানার কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। তাকেও একই হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। পরে মাসুদ রানা তাদের এক হাজার পাঁচশ টাকা দেন। পাশাপাশি ওই ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী জাহানারা বেগমের কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি মানহানির ভয়ে তাদের পাঁচ হাজার টাকা দেন। পরদিন বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শুভলি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে একই কায়দায় প্রধান শিক্ষক ফারজানা ইসলামের কাছে বিশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে এই শিক্ষক চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তারা।
একপর্যায়ে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানতে পেরে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সে সঙ্গে আব্দুল হালিম, মোক্তার হোসেন ও রায়হান পারভেজ কমলকে আটক করে গণধোলাই দেন। এ সময় মাসুদসহ অন্যরা কৌশলে পালিয়ে যান। পরে থানায় সংবাদ দেওয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে শেরপুর থানার ওসি এসএম রেজাউল করিম রেজা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা নেওয়া হয়েছে। সে সঙ্গে আটকদের মঙ্গলবার দুপুরেই বগুড়ায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ওই ঘটনায় জড়িত অন্যদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।