ঢাকারবিবার , ১৮ আগস্ট ২০২৪
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন ও আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. রাজনীতি
  9. সারাদেশ
  10. হ-ব্রেকিং

পঞ্চগড়ে হামলা-ভাঙচুর-লুণ্ঠনে তিন পরিবার নিঃস্ব

বার্তা কক্ষ
আগস্ট ১৮, ২০২৪ ৬:৫৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর অশান্ত হয়ে উঠে সারা দেশ। এ খবরে আওয়ামী লীগের সুযোগসন্ধানী একটি চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মানুষের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পঞ্চগড়েও ঘটেছে এমন নৃশংস ঘটনা।

এমন ঘটনায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার পানিমাছ পুকুরি এলাকায় তিনটি পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। হামলা চালিয়ে বাড়িঘর, আসবাবপত্র ও পানির সংযোগ লাইনসহ অনেক কিছু ভাঙচুর করা হয়। বাড়ির নারীদের গহনা, টাকা ও খাদ্যসামগ্রী লুটপাটসহ চালানো হয় বর্বরতা। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় মোটরসাইকেল। বেধড়ক মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। রক্তাক্ত করা হয় বাড়ির নারী ও শিশুদের।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় জুয়েল ও সেলিমসহ কতিপয় সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে এই নৃশংসতা চালিয়েছে হামলাকারীরা। আর তাদের ইন্ধন দেন হাফিজাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান হায়াতুন এবং সোহেল আজাদ নামে কাস্টমসে কর্মরত এক ব্যক্তি। পূর্বশত্রুতার জেরে কুড়াল, ছুরি, লোহার রড নিয়ে তারা প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করে।

রোববার (১৮ আগস্ট) এমনটাই জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এর আগে গত ৫ আগস্ট তাদের ওপর হামলা করা হয়। এরপর থেকেই চিকিৎসায় ব্যস্ত ছিলেন ভুক্তভোগীরা। দ্রুত আইনের শরণাপন্ন হবেন বলেও তারা জানান।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার দিন দুপুরে বাসায় টেলিভিশন দেখে অবসর সময় কাটাচ্ছিলেন রশিদুল ইসলাম ও তার ভাই রফিকুল ইসলামসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা। কিছু সময় পর শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর টেলিভিশনে দেখতে পান তারা। পরে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে পরিচিত জুয়েল, সেলিম, মোস্তফা, মোজাম্মেল, মিজান, মিঠু, মোশাররফ, নুর বখত, আনু ও তার ছেলে আল আমিন, কালাম ও শফি কুড়াল, লোহার রড ও লাঠিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রশিদুল, রফিকুল, জিয়াউরসহ তাদের চার ভাইয়ের বাড়িতে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে একসঙ্গে হামলা করে।

একপর্যায়ে তারা কারও বাড়ির বাঁশের বেড়া ও কাঠের দরজা, কারও আবার ঘরের জানালার থাই, দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। প্রথমে তারা টাকাপয়সা ও স্বর্ণালংকারসহ লুট করে ঘরের আলমারি, শোকেস, কাপড় রাখার ট্রাঙ্ক, ব্যাগ, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও সামগ্রী এবং বাসার পানি সরবরাহের লাইন ভাঙচুর করে। ঘরের ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী, ঘরে রাখা চালের বস্তা নিয়ে যায় তারা।

এ সময় পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পারেননি। পরে হামলাকারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রশিদুল ইসলামকে (৫৩) তার বাড়িতে পেয়ে কুড়াল ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে রক্তাক্ত করে দেয়। পরে তার ডান হাত ও দুই পা ভেঙে দেয় তারা। একপর্যায়ে হামলাকারীরা রফিকুল ইসলামের (৪৫) বাড়িতে হামলা করে তাকে বেধড়ক মারধর করে বাম পা ভেঙে দেয়। পরে তাকে রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায়।

এ ছাড়া বাড়ির নারী সদস্যদের কারও মাথায়, কারও হাতে এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে তারা। শিশুরা এসব দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করলে তাদের মুখ চেপে ধরে হামলাকারীরা। দীর্ঘসময় হামলায় ভয়াবহ নৃশংসতা চালিয়ে চলে যায় আওয়ামী লীগের এই হামলাকারীরা।

হামলার শিকার রশিদুল ইসলাম বলেন, হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের স্থানীয় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তারা আমাদের বাড়িতে অতর্কিত হামলা করে ভাঙচুর, লুটপাট করে বর্বরতা চালায়। আমার ওপর হামলা করে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে রক্তাক্ত করে। এতে আমি অজ্ঞান হয়ে ঘরে পড়ে থাকি। পরে আমার স্ত্রী এগিয়ে এলেও তারা আমাকে মারধর করে। তারা মনে করেছে আমি মারা গেছি পরে তারা আমাকে লাথি মেরে চলে যায়। আমি প্রথমে পঞ্চগড় ও পরে ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে দীর্ঘ ১২ দিন পরে বাসায় আসি। আমি এই সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

হামলার শিকার রফিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাকে মেরে রক্তাক্ত করে আমার একটি পা ভেঙে দেয়। তারা আমার মা, আমার স্ত্রীসহ পরিবারের নারী সদস্যদের বেধড়ক মারধর করে। আমাদের বাচ্চাদের মুখ চেপে ধরে ভয় প্রদর্শন করে।

ভুক্তভোগী পরিবারের জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ নেতাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত হাফিজাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান হায়াতুন ও মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত কাস্টমস কর্মকর্তা সোহেল আজাদ। এরা এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী ব্যবহার করে জমি দখল করে, পরে কিনে নেয়। এদের হামলা ১৯৭১ সালের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।

মিজানুর রহমান নামে স্থানীয় একজন বলেন, রশিদুল ভাইসহ তাদের পরিবারের ওপর হামলার খবর শুনে আমরা কয়েকজন বাজার থেকে ছুটে আসি। তবে রাস্তায় লাঠি নিয়ে হামলাকারীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা বিচলিত হই। তবে পরে আমরা এসে দেখি হামলা করে সব শেষ করে দেওয়া হয়েছে। আর মানুষগুলো রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে আমরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

অভিযোগের বিষয়ে প্রতিপক্ষ সেলিম হোসেন বলেন, আমরা আমাদের বাড়িতেই বসেছিলাম। তাদের বাড়িতে কে হামলা করেছে আমরা জানি না। যদি তারা প্রমাণ দেখাতে পারে তাহলে আইনের আশ্রয় নেবে। আর তারা আওয়ামী লীগের নাম করে এলাকায় মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতো। তাদের তো শত্রুর শেষ নেই।

তবে আওয়ামী লীগ নেতা হায়তুন ও কাস্টমস কর্মকর্তা সোহেল আজাদের ব্যাপারে কিছু বলেননি সেলিম।

হাফিজাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বলেন, এই পরিবারগুলোর হামলাকারীদের সঙ্গে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল। এরই মাঝে কিছুটা মীমাংসাও হয়। অল্প কিছু সমস্যা ছিল। গত ৭ আগস্ট আমরা বসে সম্পূর্ণ সমাধান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এর আগেই এমন হামলা করা হলো। বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো না। জমি নিয়ে বিরোধ থাকতেই পারে, তাই বলে এমন হামলা মোটেই কাম্য নয়। তবে এই পরিবারের সদস্যরা কোনো ব্যবস্থা নিতে চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারে।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি