স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৫ বছরে নেওয়া বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনায় নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গত ১৫ বছরে মেহেরপুরে ১১৪টি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সে পাওয়া ব্যক্তিরা অধিকাংশই আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি ও নেতা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অস্ত্রধারী এসব নেতাদের অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে অস্ত্র জমা দেওয়া নিয়ে নতুন জটিলতায় পড়েছেন তারা।
তবে তারা প্রতিনিধির মাধ্যমে অস্ত্র জমা দিতে পারবেন বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। জেলা পুলিশ থেকে লাইসেন্সধারীদের বা তাদের প্রতিনিধিদের অস্ত্র জমা দেওয়ার ব্যাপারে তাগিদও দেওয়া হয়েছে। এরপরও ২৯ আগস্ট সকাল পর্যন্ত মেহেরপুরে একটি অস্ত্রও জমা দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
মেহেরপুর জেলায় বর্তমানে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে মোট ৩০২টি। ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত নতুন করে বৈধ অস্ত্রধারী হয়েছেন ১১৪ জন। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে নীতিমালা পালন না করেই রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে লাইসেন্সগুলো।
জানা গেছে, নতুন বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা, বিভিন্ন সময়ে মেহেরপুর জেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যাংক কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে বাদ যাননি বিএনপির নেতা ও জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটারও।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের পর মেহেরপুর বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে ৩০২টি। গত ১৫ বছরে লাইসেন্স পেয়েছেন ১১৪টি। এর মধ্যে এক নলা বন্দুক ১৪টি, দুই নলা বন্দুক ২৭টি, শটগান ২৬টি, এনপিবি পিস্তল ১৫টি, পিস্তল ৩টি, ১২ বোর রাইফেল ১টি ও ২২ বোর রাইফেল ২টিসহ আরও কয়েক প্রকৃতির আগ্নেয়াস্ত্র। এ ছাড়াও কয়েকজন লাইসেন্স নিলেও অস্ত্র কেনেননি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সিপিবি নেতা ও মেহেরপুর বারের সদস্য অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বিষয়টাকে একেবারে ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। গত ১৫ বছরে রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের যে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সেটা শুধু স্থগিত নয়, বাতিলের দাবি জানাচ্ছি আমি। আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে ডিও লেটারের মাধ্যমে অনেকেই বৈধ অস্ত্রধারী রয়েছেন। কিছু সরকারি কর্মকর্তাও আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন। কিন্তু তারা সব সময় বডিগার্ড ও গানম্যান দ্বারা বেষ্টিত থাকে। তাদের অস্ত্রের কী প্রয়োজন? রাজনীতিবিদরাও তাদের কর্মী সমর্থক দ্বারা সব সময় বেষ্টিত থাকেন। তাদের এই অস্ত্রগুলো যে কোনো সময় বেহাত হয়ে জনজীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।
মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান খান কালবেলাকে বলেন, প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বৈধ অস্ত্রধারীদের সরাসরি বা প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজ নিজ থানায় অস্ত্রগুলো জমা দেওয়ার জন্য মোবাইল ফোন এবং অন্য মাধ্যমে জানানো হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিতে যারা ব্যর্থ হবেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ অইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মো. শামীম হাসান কালবেলাকে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত জেলাতে নতুন লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে মোট ১১৪টি। এরমধ্যে অনেকেই মারা গেছেন আবার অনেকে লাইসেন্স নবায়ন না করাতে তাদের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। তিনজন ব্যক্তি লাইসেন্স পেলেও এখন পর্যন্ত কোনো অস্ত্র কেনেননি বলে জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মেহেরপুর জেলাতে ৯৩টি লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা পড়ার কথা। বিষয়টি সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।