চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের সরকারতালুক-ছত্তরুয়া গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। এতে করে বাসা-বাড়ি, রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে দিন পার করছেন এখানকার লোকজন। বাড়ির আঙিনায় এবং সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিতে এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সরকারতালুক-ছত্তরুয়া গ্রামের পানি নিষ্কাশনের জন্য যে খাল রয়েছে সেগুলো দখল ও দূষণে আক্রান্ত। বারইয়ারহাট-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণের কাজের জন্য সড়ক উঁচু করতে হচ্ছে। সরকারতালুক গ্রামের উত্তর পাশে বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কের একটি কালভার্ট ছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু প্রশস্তকরণ নকশায় ওই কালভার্ট না থাকায় সেটি নির্মাণ করা হয়নি।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো অভিযোগ করে জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর থেকে বসতঘরে পানিবন্দি হয়ে আছি আমরা। বাচ্চারা পানিতে পড়ে যাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেওয়ার পাশাপাশি রান্না-বান্না করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন। এ ছাড়া শিশুদের শরীরের এসব নোংরা পানির কারণে বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। রাতে সাপের আতঙ্কে বসবাস করছেন তারা। শিগগিরই এই সমস্যার সমাধানের দাবি জানান।
ফার্মেসি ব্যবসায়ী অঞ্জন বণিক বলেন, ঘর্ণিঝড় রিমালের পর থেকে এখানে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এতে করে আমাদের ব্যবসা লোকসান হচ্ছে। অনেক সময় গাড়ির যাওয়ার সময় দোকানের মধ্যে পানি ডুকে যায়। আমরা চাই দ্রুত এটির সমাধান করা হোক।
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম নোমান বলেন, আমরা এর আগে কখনো এখানে এমন জলাবদ্ধতা দেখি নাই। যতক্ষণ বৃষ্টি ততক্ষণ পানি। বৃষ্টি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি চলে যেতো।
গ্যারেজ মালিক মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, আমার গ্যারেজটি পানির মধ্যে ডুবে আছে। পানির কারণে আমার গ্যারেজের ভিতরের মালামাল পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সামনে ঈদ আসতেছে। এখন পর্যন্ত গ্যারেজ খুলতে পারছিনা। পারিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে এভাবে চলতে থাকলে।
মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, এখানে দুটি কালর্ভাট ছিলো। বারইয়ারহাট-রামগড় স্থলবন্দরে রাস্তা প্রশস্তকরণে যারা নিয়োজিত ছিলেন তাদেরকে আমি ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালিন অবস্থায় বলেছি এই কালার্ভাট দুটি দিয়ে এখানকার পানি নিষ্কাশন করা হয়। কালর্ভাট গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল আমাদের ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি স্থানীয় নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন ড্রেনেজ ব্যবস্থা করার জন্য। যদি তা না হয় আমরা পাম মেশিন দিয়ে পানিগুলো নিষ্কাশন করার ব্যবস্থা করবো।
মিরসরাই ইউএনও মাহফুজা জেরিন বলেন, দুর্ভোগের কথা শুনে বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শ করেছি। তাৎক্ষণিকভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে ড্রেনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেই। তবে এখানকার অবৈধ স্থাপনা দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে।