অদ্ভুত এক দেশ তিব্বত। নিষিদ্ধ দেশ নামেও এটি পরিচিত। নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে রয়েছে হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস। রহস্যের বেড়াজালে ঘেরা তিব্বতের রাজধানী লাসাকেই মূলত নিষিদ্ধ বলা হয়ে থাকে। তবে বহির্বিশ্বের সবাই পুরো তিব্বতকেই নিষিদ্ধ বলে জানে। সেখানকার বাসিন্দারাও নিষিদ্ধ দেশের নাগরিক হিসেবে বেশ গর্ববোধও করে থাকেন।
১৯১২ সালে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিজেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে তিব্বত। এর রাজধানী লাসা। যার মানে দেবতাদের ভূমি। তিব্বতের আয়তন প্রায় ১২ লাখ ২৮ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার। ১৯৬৯ সাল থেকে তিব্বতিরা ধর্মগুরু হিসেবে দালাইলামার অধীনে চীনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে। কিন্তু সে আন্দোলন সফলতার মুখ দেখেনি। চীন এখনো তিব্বতকে নিজেদের অংশ বলে মনে করে থাকে। এর বর্তমান পরিচয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে। তিব্বতীয়দের ভাষা চীনা। বুদ্ধিস্ট ছাড়াও মঙ্গল ও মাঞ্চু সংস্কৃতি সমৃদ্ধ করেছে এই অঞ্চলকে।
তিব্বত নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে রয়েছে এর প্রাকৃতিক পরিবেশ আর বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা। আরও একটি সূক্ষ্ম কারণ রয়েছে, যা খতিয়ে দেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, তিব্বত বছরের প্রায় ৮ মাস বরফে ঢাকা থাকে। এ কারণে এক পর্যায়ে এটি দুর্গম স্থান বলে বিবেচিত হয়। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর উচ্চতায় বসবাস করাও বেশ কষ্টের।
তিব্বতের রাজধানী লাসায় দীর্ঘদিন অন্যদেশের নাগরিকদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ ছিল। ফলে গোটা রাজ্যই চলে যায় রহস্যের আড়ালে। ১৯৮০ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়। জানা যায়, তিব্বতে কারও মৃত্যু হলে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে সৎকার করা হয় না! তিব্বতিরা আত্মায় প্রবল বিশ্বাসী। তারা বিশ্বাস করেন, মৃত মানুষের আত্মা মরে যাওয়ার পরও এই জগতে বিচরণ করতে থাকে। তাই যে পর্যন্ত তাদের আত্মা জগৎ না ছাড়ে, সে পর্যন্ত তারা মৃতের সৎকার করেন না! আর ততক্ষণ সেই মরদেহ তাদের বাসাতেই রেখে দেন।
তিব্বতিদের অদ্ভুত সংস্কৃতি বা তাদের পরিবেশ, আবহাওয়া ইত্যাদি যেন ছাড়িয়ে গেছে নিষিদ্ধ দেশের খেতাবে। হিমালয়ের এই দেশে কার না ঘুরে বেড়াতে মন চাইবে? এতো শুভ্র সুন্দর, মনোরম দেশ পৃথিবীর বুকে আর কোথাও মেলা ভার।