এবার সেভেন সিস্টার নিয়ে ভারতকে সতর্ক করলো আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা-দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বা আই.আই.এস.এস। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় আর বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনের সুযোগে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো। বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাই শুধু নয়; ভারতকে জঙ্গিবাদী অপতৎপরতা মোকাবেলার প্রস্তুতি রাখার সতর্কবার্তাও দিয়েছে লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে ভারতের আশ্রয় নেয়ার পর থেকে অস্বস্তিকর অবস্থা পার করছে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক। এরইমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে দাখিল হয়েছে হত্যা-দুর্নীতিসহ কয়েক ডজন মামলা। তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জোর দাবি উঠলেও আপাতত শেখ হাসিনাকে আগলে রাখার কৌশল নিয়েছে তাঁর পরীক্ষিত মিত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার। বন্ধুত্ব রক্ষা করতে গিয়ে প্রতিবেশী দেশের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক ঝুঁকিতে পড়ায় চরম দোটানায় ভারত। হাসিনাকে আশ্রয় না দিতে যুক্তরাজ্যের অনড় অবস্থান এই পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়ীত হবার পূর্বাভাস দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কোন পথে সমাধানের দেখা পেতে পারে নয়াদিল্লি? বাংলাদেশেরই বা গুরুত্ব দিতে হবে কোন কোন পদক্ষেপে?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে কিছু প্রস্তাবনা বের করেছেন নেতৃস্থানীয় গবেষণা সংস্থা দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বা আইআইএসএসের সিনিয়র ফেলো রাহুল রায় চৌধুরী আর রিসার্চ ফেলো ভিরাজ সোলাংখি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটি মূলত বৈশ্বিক নিরাপত্তা, রাজনৈতিক ঝুঁকি ও সামরিক সংঘাত নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করে আসছে। বাংলাদেশে সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক কিছু কর্মপরিকল্পনা বা পদক্ষেপের পরামর্শও দিয়েছে আইআইএসএস। বলা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচন আয়োজনকে মূল লক্ষ্য রেখে জরুরি ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করায় মনোনিবেশ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম বাধাহীন করার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে স্থিতিশীল রাখতে কাজে লাগাতে হবে সেনাবাহিনীকে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বিএনপিসহ অন্যান্য দলের পক্ষ থেকে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। সেইসাথে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিকে পুঁজি করে বিএনপিকে নির্বাচনকেন্দ্রীক সুবিধা তুলে নেয়ার চেষ্টা জারি রাখতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য অর্থবহ সংস্কার বিচারবিভাগ, আমলাতন্ত্র ও রাজনীতির।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির পাশপাশি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় আগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইআইএসএস। বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে জ্বালানী ও খাদ্যদ্রবের দাম নিয়ন্ত্রণ আর বেসরকারি খাতের স্থবিরতা কাটাতে নজর দিতে হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দিকে। এক্ষেত্রে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার আইএমএফের কাছে থেকে চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণে বাধ্য হওয়ার বিষয়টিও উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে আইআইএসএস। শুধু বাংলাদেশ নয়। বন্ধুত্বের খাতিরে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে স্বস্তিতে নেই ভারতও। নয়াদিল্লির এই দোটানা অবস্থা চোখ এড়ায়নি লন্ডনভিত্তিক এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের। জনমতের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কাছে চরম অজনপ্রিয় নেতায় পরিণত হওয়া শেখ হাসিনার পক্ষ নেয়ায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে ভারত। বিশেষ করে বিদ্বেষমূলক এই দূরত্বে ইসলামী চরমপন্থীদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো বিশেষ করে সেভেন সিস্টার হিসেবে পরিচিত আসাম, মনিপুর, অরুণাচলসহ সাত রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। আগে থেকেই পাকিস্তান ও চীন সীমান্তে সহিংসতা নিয়ে স্বস্তিতে নেই ভারত। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ লাগোয়া সীমান্তেও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হলে তা মোকাবেলা করা সহজ হবে না। তাই ঝুঁকি এড়াতে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সাথে দূরত্ব কমাতে ভারতকে কৌশলী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ।